
প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষায় কি করা যায়, তা জানতে চেয়েছেন প্রধান মন্ত্রীর দপ্তর। এই বার্তা পেয়ে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ দল নিয়ে নদী পথ পবিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক । সকাল ১০টায় নদীতে যান্ত্রিক নৌযানে তিনি পরিদর্শনে বের হন মদুনাঘাট থেকে। প্রথমে যান রাউজানের নোয়াপাড়ার বিপরীতে জেগে উঠা বিশাল ইউটাইপ ছায়ারচর বাঁকটি দেখতে। এই বাঁকের বিপরীতে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে রাউজানের দিকে। সেখান থেকে যাত্রা করেন উজানের দিকে। তিনি প্রায় ১৫ কিলোমিটার নদীপথ পরিদর্শনে হাটহাজারীর গড়দুয়ারা পর্যন্ত যান। যাত্রপথে বিশেষভাবে দৃষ্টি নিবন্ধন করেন ভাঙন কবলিত এলাকা, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন স্পট, নদী দূষণ সৃষ্টিকারী খাত ও বিগত সময়ে যেসব এলাকায় নদীতে বাঁক কেটে গতি পরিবর্তন করা হয়েছে সেসব এলাকার অবস্থার দিকে। এসময় তার সাথে ছিলেন হালদা নদী গবেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মঞ্জুরুল কিবরিয়া, জেলা মৎস্য সম্পদ কর্মকর্তা প্রভাতি দেব, হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন, তোষণ কুমার চক্রবর্তী, মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম, রাউজান উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা নিয়াজ মোহাম্মদ মোরশেদসহ স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিক।
জেলা প্রশাসক জানান, এই নদী রক্ষায় সরকার বিশেষ ভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন। তার পর্যবেক্ষণে যা কিছু রয়েছে সবটুকু প্রস্তাবাকারে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হবে। তিনি বলেছেন, হালদা নদী শুধু বাংলাদেশ নয়, এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র। তাই হালদা নদীকে রক্ষার জন্য বর্তমান সরকার অত্যন্ত আন্তরিক। সরকারের নির্দেশনানুসারে হালদা নদী রক্ষার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। নদী থেকে বালু উত্তোলন, নদী পাশে স্থাপিত ইট ভাটা, ঘেরা জাল ফেলে মাছ ধরা, ইঞ্জিন চালিত নৌকা চলাচল বন্ধ, নদী দূষণসহ প্রত্যেক ব্যাপারে প্রশাসন যেকোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে প্রস্তুত। তবে সব পদক্ষেপ একসাথে নানা কারণে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। পর্যায়ক্রমে হালদা নদীকে রক্ষার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে হালদা গবেষক মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন পরিদর্শনের সময় প্রাকৃতিক এই মৎস্য ভাণ্ডারকে রক্ষায় কি কি পদক্ষেপ জরুরি সেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। তার মতে ছায়াচরের অশুভ প্রভাব, মদুনাঘাটে পাশাপাশি দুটি ব্রিজের কারণে নদীর তলদেশে পলি সৃষ্টি, নদী দুষণের স্থান ও কারণ চিহ্নিত ও বাঁক কেটে নদীর গতি পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের সম্ভাব্য উপায় খুঁজে বের করে জেলা প্রশাসক প্রস্তাবনা পাঠাবেন প্রধান মন্ত্রীর দপ্তরে। তিনি বলেন হালদাকে রক্ষায় ইতিপূর্বে যেসব প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুমোদন করা হয়েছে তা ছিল বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনুমান নির্ভর। একারণে ওই প্রকল্প কাজের সুফল না আসায় মাঝ পথে বন্ধ করতে হয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন জেলা প্রশাসকের গতকালের পর্যবেক্ষণ রির্পোট যথাযথ গুরুত্ব পাবে।
