
জাহেদুল আলম :- ২০১৩ সালের ২২ জুলাই সকাল ১০টা। ঘটনাস্থল রাউজান পৌরসভা সদরের মুন্সিরঘাটা এলাকার পোস্ট মাস্টারের বাড়ি। ওইদিন এই বাড়িতে জায়গার বিরোধকে কেন্দ্র করে বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ বৃদ্ধা মা জোহরা বেগমের সামনেই বুকে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাতে তার দুই ছোট ভাই আবু সুফিয়ান আজাদ ও আবু মোরশেদ আজাদকে নৃশংসভাবে খুন করেছিল। ডাবল ভাই হত্যার আসামী হয়ে খুনের কয়েকদিনের মধ্যে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জেল খাটছে হত্যাকারী বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ। ব্যাপক ধিক্কার আর আলোচনার ঝড় তোলা দুই ভাই হত্যার বিচারের রায় হতে যাচ্ছে অবশেষে। ঘটনার প্রায় আড়াই বছর পর আগামী ১৬ ফেব্র“য়ারি চট্টগ্রাম জজ আদালতে বিচারাধীন এই মামলার রায় প্রদানের দিন ধার্য্য করা হয়েছে। একসাথে দুই ছেলে হারিয়ে বুকভরা যন্ত্রনা নিয়ে নির্বাক বৃদ্ধা মা জোহরা বেগম, নিহতের দুই শিশু সন্তান, বিধবা দুই স্ত্রী বা অতি আপনজনারা কি প্রত্যাশা করছেন এ মামলার রায়ে? কিংবা পরিবারের স্ব স্ব উপার্জনম একমাত্র আপনজন হারিয়ে তাদের
জীবন জীবিকা এখন কিভাবে চলছে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গতকাল সোমবার যাওয়া হয়েছিল সেই বাড়িটিতে। অনেকটা নিরব নিস্তব্দ বাড়িতে ঢুকেই দেখা যায় আবু সুফিয়ানের স্ত্রী নাসরিন আজাদ ও আবু মোরশেদের স্ত্রী সুমাইয়া প্রকাশ কমলাকে। ঘরের বারান্দায় সোফায় বসে বাইরের দিকে ফেল ফেল তাকিয়ে আছেন মা জোহরা বেগম। পরণেই ছুটে আসলেন নিহত দুই ভাইয়ের দুই আদরের সন্তান নুশরাত জাহান ও মঈনুল ইসলাম। আবু সুফিয়ান আর আবু মোরশেদ হত্যার রায়ে প্রদানের কথা উঠতেই চোখের জল ছেড়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তাদের দুই স্ত্রী নাসরিন ও কমলা। এসময় বৃদ্ধা মা জোহরা বেগম গুমরে কেঁদে উঠে বলেন ‘আমি দুই পুত্র হত্যার দায়ে বড় ছেলে আবুল কালামের ফাঁসি চাই। সে বাঁচলে সবাইকে মেরে ফেলবে। এ জন্যে আমি নিজে আদালতে গিয়ে স্বাী দিয়েছি।’ তিনি সেদিনের ঘটনার পুণরাবৃত্তি করে বলেন ‘আমার সামনেই কালাম আমার সুফিয়ানকে হত্যার করার সময় আমি বাধা দিলে সে আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। এরপর সে আমার মোরশেদকে হত্যা করে। পরে সে বলেছে একটা মারলেও যে ফাঁসি, তিনটি মারলেও সে ফাঁসি। তাই আমি চাই কালামের ফাঁসি।’ সুফিয়ানের স্ত্রী, মামলার বাদী নাসরিন ও মোরশেদের মামলার স্বাী স্ত্রী কমলা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন ‘আমাদের একটাই দাবি খুনী কালামের ফাঁসি ইউক। তার ফাঁসি হলে আমরা কিছুটা স্বস্তি পাব।’ তারা বলেন দুই সন্তান হারিয়ে এখনও তাদের মা জোহরা বেগম প্রায় সময় কেঁদে উঠেন, অনেক সময় তাদের কথা মনে পড়লে নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দেন।’ সুফিয়ানের মেয়ে নুসরাত এবার সমাপনী পরীায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। মোরশেদের ছেলে মঈনুল এখন ৮ম শ্রেণীতে। দু’জনেই রাউজান আরআরএসি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। বাবাকে খুন হতে স্বচোখে দেখেছেন মঈনুল। নুসরাতও দেখেছেন বাবা চাচাকে মারার যাওয়া পরবর্তি শোকাহত পরিবেশ। এ শিশু দুজনও চায় তাদের বাবার হত্যাকারীর ফাঁসি ইউক। তারা বলেন ‘বাবা আমাদের কোলে নিতেন, ঘুরতে, বেড়াতে নিয়ে যেতেন। বাবার কথা এখনও মনে পড়ে। তাই বাবার হত্যাকারীর ফাঁসি চাই।’ এদিকে পরিবারের সর্বোচ্চ মানুষ দুটি হারিয়ে বিপাকে রয়েছে দুই স্ত্রী। আবু সুফিয়ানের স্ত্রী বাসা ভাড়ার অর্থে জীবন জীবিকা চালালেও মোরশেদের স্ত্রীর উপার্জনের কোন পথ নেই। তবে তিনি শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সহায়তায় জীবন যাপন করছেন একমাত্র ছেলেকে নিয়ে। উল্লেখ্য যে, নিহত ও খুনী পোস্ট মাস্টারের বাড়ির মৃত আবদুল মালেক পোস্ট মাস্টারের ছেলে। এদিকে স্বাীসহ সবকিছু ঠিকটাক থাকায় আদালত আগামী ১৬ ফেব্র“য়ারি দুই ভাই হত্যার মামলার রায় প্রদানের চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারন করেছে। এখন এ রায়ের দিকেই তাকিয়ে আছে স্বজন হারানো মা, স্ত্রী, সন্তান, ভাই ও আত্মীয়রা।
