
রাউজানটাইমস ২৪ ডেস্ক :-
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী গতকাল বুধবার রাতে দলের সাধারণ সম্পাদক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের বাসায় যান। গত মেয়র নির্বাচন নিয়ে দুই জনের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। মহিউদ্দিন চৌধুরী বিভিন্ন সময়ে মেয়রের বিষোদ্গারও করেছেন। এ দু’জনসহ তিন জেলার ৬ নেতা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। একসঙ্গে বসে ভাত খেয়েছেন। এ বৈঠক আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ ঘটাতে পারে বলে আশাবাদ নেতাদের।
আগামী ১২ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ চট্টগ্রাম থেকে স্থান পাওয়া কেন্দ্রীয় নেতাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিতে মেয়রের বাসায় গিয়েছেন বলে জানান উপস্থিত নেতারা।
মহিউদ্দিন চৌধুরী রাত ৯ টার দিকে আন্দরকিল্লা নজির আহমেদ চৌধুরী রোডে মেয়রের বাসায় পৌঁছেন। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক খোরশেদ আলম তাকে নিয়ে লিফটে করে সরাসরি মেয়রের বাড়ির ছয়তলায় বৈঠকখানায় চলে যান। সোয়া নয়টায় তিনি বৈঠকখানায় ঢুকেন। বৈঠকখানায় আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ।
মহিউদ্দিন চৌধুরী বৈঠকখানায় ঢোকার পরপরই গণমাধ্যম কর্মীরা ঢুকে পড়েন। গণমাধ্যমকর্মীদের দেখে মহিউদ্দিন চৌধুরী ক্ষুব্ধ হন। এসময় মেয়র নাছির বৈঠকখানায় ছিলেন না। মেয়রকে ডাকার জন্য তিনি উপস্থিত আওয়ামী লীগ নেতাদের অনুরোধ করেন। ৭ মিনিট পর আ জ ম নাছির বৈঠকখানায় উপস্থিত হন। তখন মহিউদ্দিন চৌধুরীকে ক্ষুব্ধ মনে হচ্ছিল। পরে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন সাংবাদিকদের বের হয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন। এরপর সাংবাদিকেরা বের হয়ে গেলে মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণের ছয় শীর্ষ নেতা রূদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হন।
মহিউদ্দিন এবং মেয়র নাছির উদ্দিন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল আলম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদের প্রশাসক এম এ সালাম ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।
জেলা পরিষদের প্রশাসক ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম বলেন, ১২ নভেম্বর আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ চট্টগ্রাম থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতাদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এই বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে আমরা বৈঠক করেছি।
তারা বলেন, এই সংবর্ধনা সভার প্রস্তুতি নিয়ে গত সোমবার মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায়ও বৈঠক হয়েছিল। সেখানে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন গিয়েছিলেন। পরবর্তী বৈঠক মেয়র তার বাসায় করার জন্য নেতাদের আমন্ত্রণ জানান।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ বলেন, রাত ১১টার দিকে একসাথে ভাত খেয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরী বাসায় ফিরেন। তিনি বলেন, দুই জনের মধ্যে দূরত্ব কমানোর জন্য আমাদের উদ্যোগ ছিল। তাদের মধ্যে বড় কোনো সমস্যা ছিল না। শুধু সমন্বয়ের অভাব ছিল। আমরা তাদেরকে কাছাকাছি আনার চেষ্টার করছি। সৌহার্দ্যপূর্ণ ও আন্তরিকতার সাথে বৈঠক হয়েছে। মনোমালিন্য অনেকটা প্রশমিত হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অতীতে আমরা দলীয় বড় অনুষ্ঠানগুলো একসাথে করতাম। দলীয় হাইকমান্ডেরও সেই নির্দেশনা ছিল। ১২ নভেম্বরের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানও একসাথে করার জন্য হাইকমান্ডের নির্দেশনা রয়েছে।
গত মেয়র নির্বাচনে দলীয় প্রার্থিতাকে কেন্দ্র করে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। নাছির উদ্দিন মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের মধ্যে দূরত্ব বেড়ে যায়। তাদের মধ্যে মনোমালিন্য দূর করার জন্য দলীয় হাইকমান্ড একাধিকবার নির্দেশনা দেন। তবুও তাদের মধ্যে দূরত্ব রয়ে গেছে।
গত বছরের ২৩ জুলাই মহিউদ্দিন চৌধুরী ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে আ জ ম নাছির উদ্দিনের বাসায় গিয়েছিলেন।
